ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪
আপডেট : ২৭ মে, ২০২৩ ১৭:০৯

যে কারণে পদ ছাড়লেন নারী সাফজয়ী দলের কোচ ছোটন

ক্রীড়া ডেস্ক
যে কারণে পদ ছাড়লেন নারী সাফজয়ী দলের কোচ ছোটন


এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণা রানী সরকারদের নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখে ফুটবলের বড় তারকা বানিয়েছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। দুই দশক ধরে ছেলেদের ফুটবল যখন ট্রফির জন্য হাহাকার করছে, তখন ছোটনের হাত ধরে মেয়েরা জিতেছে একের পর এক সোনালি ট্রফি। তার অধীনে ১৪ বছর ধরে যে সুখের সংসার ছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলে, সেখানে যে এখন দ্রোহের আগুন!

খেলা না থাকায় মানসিক অবসাদে শুক্রবার (২৬ মে) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান নারী দলের অন্যতম সেরা তারকা সিরাত জাহান স্বপ্না। মেয়েদের এই হতাশা সহ্য করতে না পারা ছোটনও বিকেলে সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আর কাজ না করার।

পল স্মলির অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়ায় নারী ফুটবলের কোচ হিসেবে আর থাকছেন না ছোটন। দু-এক দিনের মধ্যে চিঠি দিয়ে বাফুফেকে জানিয়ে দেবেন বলে শুক্রবার জানিয়েছেন তিনি। ছোটন বলেন, ‘এত কাজের চাপ আর নিতে পারছি না। গত দুই বছর এক দিনের জন্যও ছুটি পাইনি। ভোর ৪টা থেকে হার্ড ট্রেনিং শুরু। কোনো বিশ্রাম নেই। পরিবার, বন্ধুবান্ধব কাউকে সময় দিতে পারছি না। ব্যক্তিগত কোনো কিছু নেই বললেই চলে। ১ জুন থেকে আর বাফুফেতে কাজ করব না। এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’

ক্লান্তি চাকরি ছাড়ার কারণ বললেও ছোটনের অবসরের পেছনে পল স্মলি এবং বাফুফে কর্তাদের বঞ্চনা। ২০০৯ সালের ৫ জুন থেকে মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কাজ করা ছোটনকে পদে পদে স্মলির কাছে জবাবদিহি করতে হয়। নারী দলে পল সব সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। কোচ ছোটনকে মানসিক যন্ত্রণায় রাখেন।

নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরনের কাছে এগুলো নাকি বহুবার বলেছিলেন ছোটন; কিন্তু এসবের কোনো ব্যবস্থা তো করেননি, উল্টো হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। এর সঙ্গে কাজের মূল্যায়ন এবং পারিশ্রমিক নিয়েও অসন্তোষ আছে ছোটনের।

বাফুফে সভাপতি প্রায়ই বলে থাকেন ছোটন নয়, স্মলির কারণেই মেয়েদের ফুটবলের সাফল্য আসছে। তাই তো মাসে ছোটনকে ১ লাখ টাকা বেতন ধরিয়ে দিয়ে পলের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় প্রায় ১৬ লাখ টাকা। এই তো ক’দিন আগে বাফুফেতে কাজের পরিবেশ নেই বলে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানান স্মলি। ছুটি কাটিয়ে ফিরে আসা বিতর্কিত এ টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে আরও ৬ লাখ টাকা বেতন বাড়িয়ে রাখতে যাচ্ছে বাফুফে।

ফিফা-এএফসি থেকে ফান্ড এনে দেয়া স্মলি নিজে যেমন কমিশন নেন, সেখানে ভাগ বসান বাফুফের কর্তারাও। তাই তো স্মলিকে রাখতে এত চেষ্টা ফেডারেশনের। অথচ বেতন বৃদ্ধি তো দূরের কথা, মে মাস শেষের দিকে চলে এলেও এপ্রিলের বেতন ঢোকেনি ছোটনের অ্যাকাউন্টে। বেতনের সঙ্গে উৎসব ভাতাও পান না। মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে এতদিন মুখ বুঝে সব সহ্য করলেও আর কত? বাফুফের চাকরি ছাড়লেও ফুটবলের কোচিং ছাড়ার ইচ্ছা নেই ছোটনের, ‘কিছুদিন বিশ্রাম নেব। সামনে কোনো ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হবো।’ ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান স্মলির কারণেই দেশের ফুটবলের ঝান্ডা ওড়ানো নারী ফুটবলে বিরাজ করছে অস্থিরতা।

আর্থিক সংকটের নাটক সাজিয়ে গত মার্চে সাবিনাদের মিয়ানমার পাঠায়নি বাফুফে। এর পর অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে ফিফা দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বাফুফের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে। বেশ কিছুদিন ধরে সোহাগ ইস্যুটি আলোচনায় ছিল ফুটবলাঙ্গনে। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বের নেপালে সাফ জেতার পর মাঠে নামা হয়নি সাবিনা-কৃষ্ণাদের। এ মাসেই মেয়েদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হওয়ার কথা বললেও তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কবে নাগাদ এ টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াবে, তা বলতে পারছেন না কেউই।

ফুটবল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত জাতীয় দলের মেয়েরা। শঙ্কা তৈরি হয়েছে বাফুফে ক্যাম্পে থাকা সব নারী ফুটলারের মধ্যেও। তাই মাঠে নিয়মিত ফুটবল নেই। খেলা না থাকায় কোচ হিসেবে মেয়েদের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় ছোটনকে। কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

তাই তো ক্যাম্প ছেড়ে স্বপ্না নিজ বাড়ি রংপুরে চলে যেতে চাইলেও বাধা দেননি বাংলাদেশ নারী দলের কোচ। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বপ্না অবসরের কোনো কারণ না বললেও ফুটবলারদের টানাপোড়েন ও অসন্তোষ হয়তো প্রভাবিত করেছে সাফজয়ী এ ফরোয়ার্ডকে।

উপরে